সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫ , ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক : ভেস্তে গেছে চার লেন প্রকল্প জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন ইরা-সিআরইএ প্রকল্পের ‘অভিযোজন এক্সপো’ সম্পন্ন কাজের খোঁজে গ্রামাঞ্চলের দিনমজুররা শহরমুখী প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শিল্পপণ্য মেলার আয়োজন! লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা তাহিরপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ র‌্যাবের অভিযানে ভারতীয় ২৭২ বোতল মদ জব্দ যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে তারা দেশের শত্রু : কয়ছর এম আহমদ প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত : কয়ছর এম আহমদ বিশ্বম্ভরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শান্তিগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয় : তারেক রহমান সত্যশব্দের বর্ষার আয়োজন ‘বাদল গেছে টুটি’ দিরাই থানা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইউকের ফ্যামিলি গ্যাদারিং অনুষ্ঠিত জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে : কয়ছর এম আহমেদ জামালগঞ্জে উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিদর্শনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা তাহিরপুরে তোপের মুখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা

গুদামঘর সংকট ও অব্যবস্থাপনায় বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষক

  • আপলোড সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ০১:৩৮:১৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-০৪-২০২৫ ০১:৩৮:১৬ পূর্বাহ্ন
গুদামঘর সংকট ও অব্যবস্থাপনায় বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষক
মো. জহিরুল ইসলাম হাওরের বোরো ধান কাটা চলছে। সরকার এ বছর ধানের দাম নির্ধারণ করেছে মণ প্রতি ১ হাজার ৪৪০ টাকা। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর জানান, কৃষকের কাছ থেকে ২৪ এপ্রিল থেকে সরাসরি ধান কিনা শুরু করেছে সরকার। একজন কৃষক সর্বনি¤œ ১২০ কেজি, সর্বোচ্চ ১.৫০ টন ধান বিক্রি করতে পারবে সরকারের নিকট। এ হিসেবে জনপ্রতি সর্বোচ্চ প্রায় ৫০ মণ ধান বিক্রি করতে পারবে যা খুবই অপ্রতুল। চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় ১০ লাখ কৃষক ১৩৭ টি হাওরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। যেখান থেকে ধান উৎপাদন হবে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪ টন। আর চাল উৎপাদন হতে পারে ৯ লাখ ২১ হাজার ৪১৩ টন। সরকার এ বছর সুনামগঞ্জ জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করবে মাত্র ১৪ হাজার ৬০০ টন এবং সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে ১৩ হাজার ৮০০ টন, যা বিগত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। অথচ প্রতি বছর এ জেলায় ধানের উৎপাদন বাড়ছে। এ জেলায় মোট কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭ জন। তাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ধান সংগ্রহ করবে তাতে মাত্র ১২% কৃষক সুবিধা পাবেন আর বাইরে থেকে যাবেন ৮৮% কৃষক। যা কখনও কাম্য হতে পারে না। হাওর অধ্যুষিত পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য বাড়তি সুবিধার কথা চিন্তা না করে বরং তাদেরকে আরও পিছনে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ সুনামগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত ধান অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় বিপুল পরিমাণ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের ধান বিক্রি করতে ফড়িয়াদের কাছে যেতে হচ্ছে। যারা বাজার সিন্ডিকেট করে অতি অল্প দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে। সরকারের নির্ধারিত দামের প্রচারণা না থাকায় এসব লোক কৃষকের কাছ থেকে মণ প্রতি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা ধরে ধান ক্রয় করে। আবার টাকার প্রয়োজনে দরিদ্র কৃষক এসব ফড়িয়াদের কাছে আগাম ধান বিক্রি করে রাখে। ফলে ফসল তোলার সময় তাদের কম মূল্যেই ধান দিয়ে দিতে হয়। অধিকাংশ কৃষক দরিদ্র। জমি আবাদ করার জন্য যে ব্যয় প্রয়োজন তা ঋণ করে সংকুলান করে। ডিজেল, বীজ, সার ও শ্রমিকের মজুরি বেশি। ফলে অতীতের চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। সে তুলনায় বাজারে ধানের যে দাম থাকে তাতে লাভের সম্ভাবনা খুবই কম। প্রতি বছর অনেক আশা নিয়ে হাওর অঞ্চলের কৃষক ধান উৎপাদন করে। কিন্তু ফসল বিক্রয়ের সময় ধানের বাজার দাম সর্ব নি¤œ পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে দারুণভাবে নিরুৎসাহিত হচ্ছে হাওর অঞ্চলের কৃষক। খুব অল্প সংখ্যক কৃষক আছেন যারা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ধান সংরক্ষণ করতে পারেন। তারাই কেবল কিছুদিন অপেক্ষা করে উপযুক্ত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন। সরকারের খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে আবার সাধারণ কৃষক নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন। তাদেরকে কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে হয়। না হয় তার ধানে ত্রুটি দেখিয়ে বিদায় করে দেয় -এমন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সময়মতো টাকা পাওয়ারও অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়। ফলে এক শ্রেণির দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় এখানেও। এভাবে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে প্রান্তিক কৃষকদের অনাগ্রহ তৈরি হয়। আর এ সুযোগটা ভোগ করে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কৃষকের কাছ থেকে কৃষিকার্ড তাদের সংগ্রহে নিয়ে যায় এবং একাই দশ-পনেরো জনের কার্ডের বিপরীতে ধান খাদ্যগুদামে জমা করে। ফলে প্রান্তিক কৃষকের ভাগ্যে ন্যূনতম সুযোগটুকুও জুটে না। হাওর অঞ্চলে ধানের উৎপাদন বাড়ছে। অথচ সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ কমছে। প্রান্তিক কৃষকদের যেখানে উৎসাহ প্রদান করা প্রয়োজন সেখানে তাদের প্রতিকূলতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের উৎপাদিত ধান জাতীয় উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে। যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক। ফলে বোরো ধান সংরক্ষণের জন্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেন প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা হয়। বিশেষ করে খাদ্যগুদামের সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনে ইউনিয়নভিত্তিক খাদ্যগুদাম নির্মাণ করতে হবে। দালাল ফড়িয়াদের হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে হবে। সরকারের নির্ধারিত উপযুক্ত দামের ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে যেন দাম স¤পর্কে সবাই অবগত হতে পারে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও কৃষক শ্রেণির মানুষের সমন্বয় ঘটিয়ে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্যোগ সরকার যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে পারলে বেঁচে যাবে কৃষক, জোরদার হবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। লেখক : প্রভাষক (অর্থনীতি বিভাগ), শাহজালাল কলেজ, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স